আয়নাবাজি ফাঁস, বাংলা চলচ্চিত্রের হুমকি

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৫:৩০

সাহস ডেস্ক

অনেকদিন পড়ে মানসম্পন্ন বাংলা ছবির খরা কাটিয়ে দর্শকদেরকে হলমুখী করেছিলো অমিতাভ রেজা চৌধুরী নির্মিত আয়নাবাজি ছবিটি। চঞ্চল চৌধুরী, নাবিলা, পার্থ বড়ুয়া অভিনীত এই ছবি মুক্তির পর থেকেই ছিলো আলোচনায়। হলগুলোতে ছিলো উপচে পড়া ভীর। 

দিনদিন যখন আয়নাবাজির হল সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে হল মালিক আর প্রযোজকরা লাভের টাকা গুনতে শুরু করেছেন ঠিক তখনই এল একটি দুঃসংবাদ। ২০ অক্টোবর রাতে মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি টেলিভিশন-এ আপলোড করা হয় পুরো ছবিটি। এরপর সেখান থেকে অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায় ছবিটি। এমনকি ফেসবুক লাইভেও চলে আসে আয়নাবাজি। বিষয়টি টের পেয়ে পরদিনই ছবিটি সরিয়ে নেয় যথাযথ কর্তৃপক্ষ।

দেশের প্রেক্ষাগৃহে দর্শকেরা যখন টিকিটের জন্য হাহাকার করছেন, তখন ছবিটি এমন সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় ফেসবুকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় আয়নাবাজি চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষও। তাদের মতে, যেভাবে সবাই দলে দলে ছবিটি দেখতে হলে ছুটছিলেন, তাতে দীর্ঘদিনের দর্শক–খরা কাটিয়ে উঠছিল বাংলাদেশের সিনেমা হলগুলো। কিন্তু অন্য মাধ্যমে সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডের সহকারী ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন বলেন, ‘আয়নাবাজি ছবিটির মাধ্যমে আমরা আশার আলো দেখছিলাম। মুক্তির পর থেকে আয়নাবাজি ছবির প্রতিদিনের আয় থাকত ১ লাখ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর গত দুই দিন ১ লাখও অতিক্রম করেনি।’

মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটার ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের প্রধান ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘সিনেমা হলের পাশাপাশি আমরা ছবিটির ডিজিটাল মুক্তির কথা চিন্তা করেছি। শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই মোবাইল টিভিতে ছবিটি মুক্তি দিই। কিন্তু গ্রাহকেরা এক মোবাইল থেকে আরেক মোবাইল দিয়ে ভিডিও করেছে এবং ফেসবুকে “লাইভ” দিয়ে দিয়েছে। আমরা আইনি পদক্ষেপও নিয়েছি।’

আয়নাবাজি ছবিটি এভাবে ফাঁস হয়ে যাওয়ায় চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই ক্ষুব্ধ। অনেকে ফেসবুকে মন্তব্য দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ছবির পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘শুধু রবি টিভিতে ছাড়া আর কোথাও দেখা যাবে না, সে কারণেই সেখানে ছবিটি আপলোড করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সাইবার অপরাধীরা অনেক মেধাবী। আমাদেরও ভুল সিদ্ধান্ত অবশ্যই ছিল, এ কারণে কেউ কষ্ট পেলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। যে যত গুজব ছড়াক, আমি বলছি আয়নাবাজির একমাত্র পাওয়া আপনাদের (দর্শকের) ভালোবাসা।’ 

পাশাপাশি ক্রমাগত সমালোচনার বানে বিদ্ধ হয়ে পরিচালক অমিতাভ রেজা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আপাতত নতুন সিনেমা নির্মাণ থেকেও সরে দাঁড়াবার ঘোষণা দেন। 

যদিও অমিতাভ রেজার বিরতির কথা শুনে মিডিয়া ও মিডিয়ার বাহিরের অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান এবং অভিমান থেকে এমন গুরুতর সিদ্ধান্ত না নিতে এবং নতুন সিনেমার কাজ শুরু করতে অনুরোধ জানান। 

এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, পাইরেসির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। ইতিমধ্যে পাইরেসির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান পুলিশ। 

আয়নাবাজি ছবিটি সিয়াটল দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ন্যারেটিভ ফিল্ম’ পুরস্কার জিতে নিয়েছে। সোমবার (২৪ অক্টোবর)আয়নাবাজি’কে সিয়াটল দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ন্যারেটিভ ফিল্ম’ হিসেবে ঘোষণা দেন উৎসব আয়োজকরা। আয়নাবাজি মুক্তি পায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত