চলচ্চিত্র নীতিমালা

চলচ্চিত্রে ধর্মীয় সহিংসতা রোধে জনগণকে উজ্জীবিত করতে হবে

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০১৭, ১১:৩৭

সাহস ডেস্ক

অবশেষে জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। এ ব্যাপারে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। 

নীতিমালা অনুযায়ী কোনো চলচ্চিত্রে সরাসরি ধর্ষণদৃশ্য দেখানো যাবে না। শিশু, নারী কিংবা উভয়ের প্রতি সহিংসতা, বৈষম্যমূলক আচরণ বা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডকে উদ্বুদ্ধ করে এমন কোনো ঘটনা ও দৃশ্য চলচ্চিত্রে সরাসরি দেখানো যাবে না। 

কোনো অশোভন উক্তি/আচরণ এবং অপরাধীদের কার্যকলাপের কৌশল প্রদর্শন যা অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে অনুসৃত ও মাত্রা আনয়নে সহায়ক হতে পারে এমন দৃশ্য পরিহার করতে হবে। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত সন্ত্রাস ও সহিংসতা প্রদর্শন করা যাবে না। এখন থেকে নির্মাতাদের এসব অবশ্য অনুসরণ করতে হবে।

বিদেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানি এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিদেশে রপ্তানির অনাপত্তির সুপারিশ প্রদান করতে চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের সমন্বয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। এ ছাড়া চলচ্চিত্র বিষয়ে পরামর্শের জন্য একটি জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। এই কমিটি হবে ১৫ সদস্যের।

নীতিমালা অনুযায়ী, চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সমুন্নত রাখতে হবে। কোনোভাবেই রাষ্ট্রবিরোধী ও জনস্বার্থবিরোধী বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য পরিবেশন করা যাবে না। দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার সুষ্ঠু প্রতিফলন এবং এর সঙ্গে জনসাধারণের নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন ও সাংস্কৃতিক ধারাকে দেশপ্রেমের আদর্শে অনুপ্রাণিত করার প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। চলচ্চিত্রে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবধারার সুষ্ঠু প্রতিফলন ঘটাতে হবে। সব ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং ধর্মীয় সহিংসতা রোধে জনগণকে উজ্জীবিত করতে হবে। 

সমাজ জীবনের সব ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমমর্যাদা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করতে হবে। চলচ্চিত্র মাধ্যমে নৈতিকতাবোধের উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন, সামাজিক কূপমণ্ডকতা ও কুসংস্কার দূরীকরণ এবং সমাজবিরোধী কার্যক্রম থেকে নিবৃত থাকার জন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক শিক্ষামূলক কর্মকা- ও তথ্যনির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও সংহতি ক্ষুন্ন হতে পারে এমন কোনো তথ্য, কাহিনি, দৃশ্য ও বক্তব্য চলচ্চিত্রে পরিবেশন ও প্রদর্শন করা যাবে না। 

ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে উৎসাহ অথবা আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গে প্ররোচিত করতে পারে এমন কোনো কাহিনি, দৃশ্য ও বক্তব্য চলচ্চিত্রে প্রদর্শন করা যাবে না; চলচ্চিত্রে তামাক, তামাকজাত পণ্য, মদ ও এলকোহল সেবন ও অন্যান্য মাদক গ্রহণ দেখানো যাবে না। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে মদ ও সিগারেট সেবন প্রদর্শন আবশ্যক হলে এ সংক্রান্ত আইন/বিধির বিধান অনুযায়ী এসবের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে দর্শকদের অবহিত করতে হবে। চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা ভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আঞ্চলিক ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যাবে, তবে কোনো বিশেষ চরিত্রকে নেতিবাচক অথবা ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপনের জন্য বিশেষ কোনো অঞ্চলের ভাষা পরিহারের চেষ্টা করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র রপ্তানি ও বিদেশি চলচ্চিত্র বাংলাদেশে আমদানির ক্ষেত্রে সমতার নীতি গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হবে বিদেশে বাংলাদেশের প্রদর্শনের মাধ্যমে বাজার তৈরি, সম্প্রসারণ এবং দেশীয় সংস্কৃতির প্রচার। বিদেশ থেকে চলচ্চিত্র আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ চুক্তি এবং সমঝোতা ছাড়া কোনো বিশেষ দেশ বা ব্যক্তিকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যাবে না। একইভাবে কোনো বিশেষ দেশ বা প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া বাংলাদেশে চলচ্চিত্র রপ্তানি থেকে বারিত করা যাবে না। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন, বিধি ও আদেশ অনুযায়ী সরকারের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে। এ অনাপত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে রপ্তানির জন্য প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রের বিষয়, কারিগরি ও নান্দনিক মান বিচার করে সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্র বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে পারবে কিনা এবং বিদেশে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বাজার সৃষ্টি/সম্প্রসারণে সহায়ক হবে কিনা এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। আবার বিদেশ থেকে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র আমদানির ক্ষেত্রেও প্রচলিত আইন, বিধি ও আদেশ অনুযায়ী সরকারের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে।

 যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মানোন্নয়ন ও উৎকর্ষ সাধন, যৌথ বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ এবং চলচ্চিত্রের বাজার সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর চলচ্চিত্রের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান/প্রযোজক সমন্বয়ে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ উৎসাহিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র নির্মাণের সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি অনুসরণ এবং নির্মিত চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও বিতরণ ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত