আজ রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:২০

সাহস ডেস্ক

আজ ২৭ জানুয়ারি রক্তাক্ত সলঙ্গা বিদ্রোহ দিবস। সিরাজগঞ্জবাসী শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছেন সলঙ্গা বিদ্রোহের মহানায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক জাতীয় নেতা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশকে।

ব্রিটিশ শাসনামলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলনে জনতা উদ্বেলিত হয়ে বিলেতি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের সংগ্রাম শুরু করেছিল। এমনি একটি আন্দোলনের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে সলঙ্গায়। সে সময় তৎকালীন পাবনা জেলার বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গায় একটি ব্যবসায়িক জনপদ হিসেবে সপ্তাহে ২ দিন হাট বসতো। ১৯২২ সালের ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার ছিল বড় হাটবার। 

মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশের নেতৃত্বে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের কর্মীরা হাটে নামে বিলেতি পণ্য কেনাবেচা বন্ধ করতে। আর এ স্বদেশি আন্দোলনের কর্মীদের রুখতে ছুটে আসে পাবনা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আর এন দাস জেলা পুলিশ সুপার ও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রশাসক এসকে সিনহাসহ ৪০ জন সশস্ত্র লাল পাগড়িওয়ালা পুলিশ। সলঙ্গার গো-হাটায় ছিল বিপ্লবী স্বদেশী কর্মীদের অফিস। পুলিশ কংগ্রেস অফিস ঘেরাও ও গ্রেপ্তার করে মাওলানা আব্দুর রশিদকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুক্ত করতে প্রায় ৪০ হাজার জনতা সেদিন ব্রিটিশ বিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সলঙ্গার সংগ্রামী জনতা। 

জনতার ঢল ও আক্রোশ দেখে ম্যাজিস্ট্রেট জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীকে গুলি চালাতে নির্দেশ দেয়। শুরু হয়ে যায় বুলেট বৃষ্টি। এতে সলঙ্গার হাটে সাড়ে ৪ হাজার সাধারণ হাটুরে জনতা শহীদ হয়। হত্যাকাণ্ডে হতাহতের সরকারি সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজার দেখানো হলেও বেসরকারি মতে ১০ হাজারেরও অধিক বলে জানা যায়। মাওলানা আব্দুর রশিদ সলঙ্গা বিদ্রোহ উপনিবেশিক শাসনের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল

সলঙ্গার রক্তাক্ত বিদ্রোহ শুধু বাংলার মাটিকে সিক্ত করেনি, সিক্ত করেছে সমগ্র উপমহাদেশকে। যে রক্তে ভেজা পিচ্ছিল পথে, অসহযোগ আন্দোলনে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তা সলঙ্গা বিদ্রোহেরই ফসল।

মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে গণমানুষের রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে সুসংগঠিত হয়েছে। আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি পালন করেছেন বিশেষ ভূমিকা। অসহযোগ, খেলাফত, ’৪৭-এর পাকিস্তান অর্জন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান, ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি গৌরবমন্ডিত ভূমিকা পালন করেন।

অন্যদিকে স্বাধীনতার রক্তসিঁড়ি ঐতিহাসিক সলঙ্গা বিদ্রোহেরও তিনি মহানায়ক। জাতীয় এই নেতা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার তারুটিয়া (বর্তমানে রশিদাবাদ) গ্রামে ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর (বাংলা ১১ অগ্রহায়ণ ১৩০৭)-এ এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সুপ্রসিদ্ধ আলেম ও পীর হযরত আবু ইসহাক (রঃ) ছিলেন উত্তর বাংলার একজন সুখ্যাতিসম্পন্ন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ)-এর বংশধর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত