রাজমোহ ত্যাগ করে সুরের মূর্ছনায় হলেন সঙ্গীত সম্রাট

সঙ্গীত যুবরাজ শচীন দেবনবর্মণের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:২৫

মো: ইমাম হোসাইন

০১. 
কুমিল্লার যে কয়েকটি বিষয় বিশ্বজুড়ে সমাদৃত, তারমধ্যে সঙ্গীতাঙ্গন অন্যতম। সঙ্গীত সাধনায় কুমিল্লার বহু গায়ক স্মরণীয় হয়ে আছেন। দেশীয় সঙ্গীত জগতের যুবরাজ খ্যাত শচীন দেবনবর্মণ। তার অনেক কালজয়ী গানে এখনো বাঙালার মানুষ বিমোহিত হয়। গ্রামে গঞ্জে বেজে উঠে সবার মুখে মুখে শচীন কর্তার গান। শচীন দেব বর্মণকে কে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্থানীয় প্রশাসনসহ নাগরিকদের রয়েছে নানা উদ্যোগ।

০২.
কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ চর্থা নবাববাড়ীতে ১৯০৬ সালের ০১ অক্টোবর তাঁর জন্ম। পিতা ছিলেন ত্রিপুরা মহারাজা ঈশান চন্দ্র বর্ণনের ছেলে নবদ্বীপ কুমার বর্ণন। ঈশান চন্দ্র মানিক্য তাঁর জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছেলে নবদ্বীপ চন্দ্র বর্মণ কে ত্রিপুরার রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন নবদ্বীপ চন্দ্র বর্ণনের বয়স সবেমাত্র ১৭। কিশোর বয়সেই ত্রিপুরার দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেন তার বাবা। কিন্তু বিধি বাম ঈশান চন্দ্র মানিক্যের মৃত্যুর পর তার ভাই বীরচন্দ্র মানিক্য নিজেকে জোরপূর্বক ত্রিপুরা মহারাজা ঘোষণা করেন এবং নবদ্বীপ চন্দ্র বর্মণকে রাজবাড়ির একটি কক্ষে আটক রেখে বছরখানেক নির্যাতন করেন।

০৩.
রাজবাড়ির কর্মকর্তা কৈলাস সিংহের পরামর্শে ১৮৭০ সালে নবদ্বীপ চন্দ্র বর্মণ তার মা কে নিয়ে বর্তমান কুমিল্লার নবাববাড়িটিতে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং সিংহাসনের দাবি ছেড়ে দেন। রাজা বীরচন্দ্র মাণিক্যের অর্থানুকূল্যে, কুমিল্লার চর্থায় ৬০ একর জমি নিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন কুমার বাহাদুর নবদ্বীপচন্দ্র। এই প্রাসাদেই তাঁর সর্বকনিষ্ঠ সন্তান শচীন দেববর্মণের জন্ম। ১৯১০ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঠাকুরপাড়ার সুরলোক, কান্দিরপাড়ের সবুজ সংঘ নাট্যদল, দি গ্রেট জার্নাল থিয়েটার পার্টি, ইয়ংম্যান্স ক্লাব ইত্যাদি নিয়ে গড়ে উঠেছিল কুমিল্লার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল।

১৯৩০ সালে শচীন দেব বর্মনের পিতা মৃত্যু বরণ করলে বাড়ির সবাই ভারতে চলে যায়।  ১৯৪৭ সালে বাড়িটি মিলিটারি গোডাউনে পরিণত হয়। ১৯৫৭ সালে জায়গাটি ভবন ও পুকুর ব্যতীত বাকি জায়গা সরকারি হাঁস মুরগির খামার কে লীজ দেওয়া হয়। ১৯৮৩ সালে তদানীন্তন জেলা প্রশাসক সৈয়দ আমিনুর রহমান কুমিল্লায় কবি নজরুলের স্মৃতি স্মারক স্থান গুলো চিহ্নিত করতে একটি কমিটি করেন, তারা তখন শচীন কর্তার বাড়িটিও চিহ্নিত করে করে জনসম্মুখে আনেন।

সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল মহোদয়ের উদ্যোগে ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন মহোদয়ের সহায়তায় পূণরায় বাড়িটি সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষের নজরে আসে বাড়িটি। স্থানীয় গবেষকরাও শচীন চর্চায় মনোনিবেশ করেন। প্রতিবছর বাড়িটিতে তার মৃত্যু দিবস কে স্মরণ করে শচীন মেলা আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।

বলে রাখি কৈলাস সিংহের সে সময়ে ত্রিপুরার রাজপরিবারের কাহিনি ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে "রাজমালা" নামক একটি গ্রন্থ লিখেন। যা বর্তমানে ত্রিপুরা অঞ্চলের ইতিহাস জানার জন্য দুর্লভ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত স্থানীয় ইতিহাস প্রেমিদের মাঝে। নবদ্বীপ চন্দ্র বর্মন ছিলেন ঈশান চন্দ্রের দ্বিতীয় পুত্র। নবদ্বীপ চন্দ্র বর্মন ছিলেন কুমিল্লা মিউনিসিপ্যালের প্রতিষ্ঠাতা।

কুমিল্লাকে ঘিরে তার সকল কর্মযজ্ঞ অতিবাহিত হতে থাকে। ১৯০৬ সালে শচীন দেবের জন্মের পর শৈশব কৈশোর কেটেছে কুমিল্লার নির্মল পরিবেশে। শিক্ষা জীবন ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় শুরু হলেও পরবর্তীতে কুমিল্লা ইউসুফ হাইস্কুল এসে ভর্তি হন। পরে কুমিল্লা জিলা স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। জিলা স্কুল থেকেই মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর ১৯২৪ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন।

ছাত্রজীবনেই সঙ্গীত অনুরাগী হয়ে উঠেন শচীন কর্তা। সঙ্গীতের খুঁজে চষে বেড়িয়েছেন কুমিল্লার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মেডো পথের বাঁশির সুর শুনে লিখে পেলেন কালজয়ী গান "বাঁশি শুনে আর কাজনেই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি"। এমন গানেই দেশজুড়ে একসময় সবার মুখে মুখে গুন গুন করে শুনা যেত। এখনো তার আবেদন পুড়াইয়া যায়নি। কৃষক তাঁতী মাঝি মাল্লাদের সাথে মিশে যেতেন সঙ্গীতের আবগাহনে। সঙ্গীত নেশায় তিনি দুনিয়ার সকল মোহ ত্যাগ করেন৷ তাঁর বিখ্যাত সৃষ্টি "বাঁশি শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি" - গানটির মাধ্যমে একজন রাখালের বাঁশির সুরে গ্রামের নারীর মনের ব্যাকুলতাকে তিনি তাঁর সুরের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। পল্লীবাংলার মানুষের মনে যে ভালোবাসা বোধ, যা রাখালিয়া বাঁশির সুরে আকুল হয়ে ওঠে এ গানের মধ্যে সেটি প্রমাণিত। রাধাকৃষ্ণের প্রেমের কথা এখানে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এ গানের সুরে কীর্তনের একটা আভাস বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

"শোন গো দখিনো হাওয়া প্রেম করেছি আমি"- এই প্রেমের গানটিতেও তিনি লোকসুরের প্রয়োগ করেছেন অত্যন্ত সুন্দরভাবে। দরাজ কণ্ঠে মনের অভিব্যক্তিকে উপস্থাপন করেছেন শ্রোতাদের সামনে। এতটা খোলা কণ্ঠে সংগীতটাকে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্য হলো একজন প্রেমিক যখন প্রেমিকাকে ভালোবাসে, তার সে ভালোবাসাটা কেমন তা সবাই জানুক বা তার মনে লুকানো যে বাসনা, তা আজ সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠুক। ভালোবাসার জন্য যে সুন্দর মন, যে সাহস থাকা প্রয়োজন, তা তিনি সুরের প্রয়োগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ গানের মধ্যে বাংলার ঋতুর কথা যেমন রয়েছে, তেমনি সুরের মধ্যেও রয়েছে মাটির গানের মাদকতা।

"ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা পান খাইয়া যাও মাঝি"- লোকসুরের এ গানটি আজ পর্যন্ত সমানভাবে জনপ্রিয়। গানটির সুর শুনলেই শ্রোতার মনে প্রেমানুভূতি জেগে ওঠে। একজন নারীর ভালোবাসাকে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এ গানের মধ্য দিয়ে। এ গানে শিল্পীর সুরের মাধুর্য এবং তাল-ছন্দের প্রয়োগ পরিপূর্ণ ও সার্থকরূপে ফুটে উঠেছে তাঁর গায়কির মাধ্যমে।

০৪.
কুমিল্লাই রচিত হয় তাঁর কালজয়ী সকল সঙ্গীত। কুমিল্লার লোকায়ত সংস্কৃতি ঘিরে তাঁর বাড়তি আগ্রহের কমতি ছিল না। বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন গান তার সঙ্গীত সাধনার প্রধান ক্ষেত্র ছিল। সে সময়েই তিনি এ অঞ্চলের বহু লোকগান সংগ্রহ করেন।  যা তার সঙ্গীত জীবনের ভীত তৈরি করে।

তার কালজয়ী গানের মধ্যে
ক. তুমি এসেছিলে পরশু, কাল কেন আসনি।
খ. কে যাসরে ভাটির গাঙ বাইয়া
গ. বাঁশি শুনে আর কাজ নেই
ঘ. আমি টাকডুম টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল, সব ভুলে যাই তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল।
ঙ. ‘যদি দখিনা পবন’ (রাগপ্রধান),
চ. প্রেমের সমাধি তীরে’ (কাব্যগীতি),
ছ. নিশীথে যাইও ফুলবনে’ (পল্লিগীতি),
জ. বধুঁগো এই মধুমাস’ (পল্লিগীতি),
ঝ. ওরে সুজন নাইয়া’ (পল্লিগীতি)

তিনি লোকজ সঙ্গীত ও ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের সংমিশ্রণে নিজস্ব ঘরানার সঙ্গীত বলয় সৃষ্টি করেন।

০৫.
সঙ্গীত বিষয়ে অধিক জানার আগ্রহে তিনি কলকাতায় পাড়ি দেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এমএ ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ না করেই তিনি পূর্ণ মনোযোগ দেন সঙ্গীত সাধনায়। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জানার আগ্রহে তিনি অন্ধ সঙ্গীতজ্ঞ কৃষ্ণচন্দ্রের স্মরণাপন্ন হন।
শচীন দেব অনেক বাংলা গানে সুর দিয়েছেন।
শচীন দেবের পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র দেব বর্মণ ছিলেন একজন সেতার বাদক ও ধ্রুপদ সংগীতশিল্পী। তিনিই ছিলেন শচীন দেবের প্রথম শিক্ষাগুরু। এর পর তাঁর সংগীতশিক্ষা চলে উস্তাদ বাদল খাঁ ও ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। ধ্রুপদ সংগীতশিক্ষা গ্রহণের ফলে তাঁর মধ্যে সংগীতের মৌলিক জ্ঞান সঞ্চার হয়। শচীনকর্তার পরবর্তী জীবনে সুর সাধনায় প্রভাব বিস্তার করেছিল এই শিক্ষা। এরপর তিনি উস্তাদ আফতাব উদ্দিন খাঁ সাহেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

কুমিল্লায় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে তাঁর সঙ্গীত সংযোগ ঘটে। পরে কলকাতায় তাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়।

০৬.
সঙ্গীত যুবরাজ শচীন কর্তা ছিলেন ক্রীড়া প্রেমী ছিলেন। তিনি কুমিল্লা ইয়ংমেন্স ক্লাবের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ফুটবল খেলার রেফারির দায়িত্ব পালন করা ছিল তাঁর শখ। তিনি ক্রিকেট খেলারও আম্পায়ার হিসেবে উপস্থিত থাকতেন।

০৭.
সঙ্গীত সাধনার অর্জন হিসেবে কলকাতায় তার বাংলা গানের রেকর্ড বের হয়েছে ১৩১টি। তারমধ্যে নিজস্ব সুরের আছে ১১৪টি। তার বাল্যবন্ধু অজয় ভট্টাচার্য গীতিকার হিসেবে গান করেছে ৪১টি। মাত্র ৩৮ বছরে তিনি মারা যান। না হয় এ সংখ্যা আরো বেশি হত। হিন্দুস্থান মিউজিক প্রোডাক্টস থেকে শচীন কর্তার প্রথম গানের রেকর্ড বের হয় ১৯৩২ সালে। এইচএম ভিতে রেকর্ড শুরু হয় ১৯৪৭ সাল হতে। রাজনী ছবিতে প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা করেন শচীন কর্তা। তার মোট সঙ্গীত পরিচালিত সিনেমা হচ্ছে ১৩টি। হিন্দি সিনেমা শিকারি তে তিনি প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা করেন। কবি নজরুলের কথা ও সুরে তিনি ০৪টি গান রেকর্ড করেন।

০৮.
১৯৩৪ সালে এলাহাবাদে অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফেন্সে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার সঙ্গীতাঙ্গন পোক্ত হয়। ১৯৩০ সালে পিতা নবদ্বীপ চন্দ্র বর্মণের মৃত্যুর পর তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আর্থিক সংকট দেখা দিলে তিনি কলকাতার 'ত্রিপুরা প্যালেস' আবাস ছেড়ে ছোট্ট বাসায় উঠেন। ১৯৩৮ সালে হাইকোর্টের জজ কমল নাথ দাশ গুপ্তের দৌহিত্রী এবং তার শিষ্য মীরা ধর গুপ্তের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মীরা ধরও সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। ১৯৩৯ সালে তাদের কোল আলোকিত করে জন্ম নেন উপমহাদেশের আরেক সঙ্গীত কিংবদন্তি রাহুল দেব বর্মণ। যিনি সঙ্গীত জগতে আরডি বর্মণ হিসেবে পরিচিত।  ১৯৩৯-৪০ দুই বছর তিনি বামধারা গণনাট্য সংঘের সাথে সংযুক্ত ছিলেন। তিনি এ সংঘের লোক সঙ্গীত বিভাগের সভাপতি ছিলেন। এ ধারায় যুক্ত ছিলেন সঙ্গীত নক্ষত্র হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, উস্তাদ রবি শংকর, সলিল চৌধুরীসহ বহু গুণী শিল্পী।

০৯.
১৯৪২ সালে মুম্বাইয়ের রঞ্জিত স্টুডিও এর মালিক চন্ডুলাল শচীনকে সঙ্গীত পরিচালক হতে আহ্বান জানান। তাতে তিনি সায় দেন নি। কলকাতা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। 

১৯৪৪ সালে আবার মুম্বাই হতে ডাক এলে তিনি মুম্বাইয়ে চলে আসেন। এখানে তিনি সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পেতে শুরু করেন।

১০.
ট্যাক্সি ড্রাইভার সিনেমার জন্য তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন।
পিয়াসা সিনেমায় সুরারোপের জন্য এশিয়ান ফিল্ম সোসাইটিজ পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৬২ সালে তিনি হেলসিঙ্কি ফিনল্যান্ড আন্তর্জাতিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অন্যতম বিচারক হিসেবে ছিলেন।
তিনি সঙ্গীতে 'সন্তহরিদাস' পুরস্কার লাভ করেন।
ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত করেন। খেতাব প্রদান করেন। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. জাকির হোসেন।


১১.
কুমিল্লার সমকালীন সমাজ যখন শচীন কর্তাকে ভুলতে বসেছিল, ঠিক সে মুহূর্তে জেলা প্রশাসন স্থানীয় বিশিষ্টজনের সহায়তা শচীন কর্তার নবাববাড়ির পরিত্যক্ত বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। তিনি কুমিল্লা প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দি ত্রিপুরা ক্লাব বর্তমানে দি কুমিল্লা ক্লাবের টেনিস কোর্টে নিয়মিত যাতায়াত করেন। কিন্তু সঙ্গীত বিঘ্ন হবে বিধায় তিনি এখানে অনিয়মিত হয়ে যান। শচীন জন্মশতবার্ষিকীতে কুমিল্লা ক্লাব বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।

সালটি ছিল ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ। শচীন দেব বর্মন প্যারালিটিক স্ট্রোক হয়ে কোমায় ছিলেন পাঁচ মাস। অবশেষে ৩১ অক্টোবর এ কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা ও শিল্পীর জীবনাবসান ঘটে।

বিশ্বায়নের এ যুগেও আমরা তাঁর গানে মুগ্ধ হই। মাটির টান অনুভব করি, মানুষের প্রতি সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ উপলব্ধি করি। সুরের মাদকতায় মানুষের উপলব্ধি বোধ সৃষ্টি করতে সক্ষম তা তাঁর গানের মধ্য দিয়ে বহুভাবে প্রমাণিত। দেশের প্রতি ব্যাকুলতা বোধ তাঁর গানের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায় বারবার। লোকসুর আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমাদের অবস্থানকে, জাগ্রত করে আমাদের অস্তিত্ববোধকে। বাংলা সংগীতের আকাশে এক অনুপম নক্ষত্র শচীন দেব বর্মণ; যাঁর নাম সবসময়ই বাংলা গানের শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালকদের মাঝে উঠে আসে বারবার।

লেখক : উদ্যোক্তা ও প্রধান সমন্বয়ক, পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ

তথ্যসূত্র:
ক. শ্রী কৈলাস সিংহের রচিত রাজমালা গ্রন্থ।
খ. এড. গোলাম ফারুক রচিত মর্তের রাজ্য ছেড়ে সুরের রাজ্য গ্রন্থ।
গ. দৈনিক কুমিল্লার কাগজ নাট্য সংগঠক শাহাজান চৌধুরী লেখা কলাম।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত