সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে রঙিন মাছের চাষ

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:৪৬

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সাইফুল ইসলাম শখের বসে রঙিন মাছের চাষ শুরু করেন। সেই শখের রঙিন মাছ চাষ এখন তার জীবন জীবিকা পাল্টে দিয়েছে। অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি তাকে দেশব্যাপী পরিচিতিও এনে দিয়েছে। এলাকায় এখন তাকে সবাই ‘রঙিন মাছের কারিগর’ হিসেবে চেনে।

কলারোয়া উপজেলার ব্রজবক্স গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, সংসারের অভাবের তাড়না থাকলেও শখ তার পিছু ছাড়েনি। নানা সংকটের মাঝেও তিনি রঙিন মাছ চাষ করেছেন। ২০০৪ সালে এক বন্ধুর সহায়তায় প্রথমে ছয় জোড়া রঙিন মাছ ৬২০ টাকায় কিনে তিনি চাষ শুরু করেন। এক সময় শখের বসে রঙিন মাছ চাষ করলেও পরে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পুকুর ইজারা নিয়ে রঙিন মাছ চাষের পরিধি বাড়ান। আজ তার মূলধন প্রায় ২৫ লাখ টাকা।

সাইফুল ইসলাম জানান, এক সময় অভাবের কারণে ভারতে গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। সেখানে একটি রঙিন মাছ উৎপদনকারী প্রতিষ্ঠানে খুব কম বেতনে চাকরি শুরু করেন। বিদেশে ভালো না লাগায় কিছুদিন পর দেশে ফিরে আসেন। সংসার চালাতে রাজধানীর মিরপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু ওই বেতনে বাসাভাড়া দিয়ে সংসার চলে না। ফিরে আসেন গ্রামে। এক বন্ধুর সহায়তায় ছয় জোড়া রঙিন মাছ নিয়ে চাষ শুরু করেন ধীরে ধীরে আজ তিনি এ জায়গায় পৌঁছেছেন। 

সাইফুল বলেন, ২০১৪ সালে পুকুর ইজারা নিয়ে বেশি করে রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। বিশেষ পদ্ধতিতে উৎপাদন করা কমেট, কই কার্প, গোল্ড ফিস, অরেন্ডা, মিল্কি, সিল্কি কই কার্প, কিচিং গোরামিনসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির রঙিন মাছ তার পুকুরে উৎপাদন হচ্ছে। এই মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়।

তিনি জানান, এক সময় এ সব মাছ বিদেশে থেকে আমদানি করতে হতো। কিন্তু এখন তার হ্যাচারিতে উৎপাদন করা মাছ সাতক্ষীরার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। রঙিন মাছের জন্য দেশের সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানীর কাঁটাবনের ব্যবসায়ীদের অনেকেই তার কাছ থেকে রঙিন মাছ নিয়ে যান।

বিশেষ পদ্ধতিতে মাছের রঙ পরিবর্তনও করার কথা উল্লেখ করেন সাইফুল ইসলাম। রঙ বদলিয়ে সিল্কি নামের একটি মাছ তৈরি করেন তিনি। অনেকটা জরির মতোই দেখতে। সে জন্যই নাম দিয়েছেন সিল্কি। রঙ পরিবর্তন করা এ মাছের চাহিদাও প্রচুর। 

সাফুল ইসলাম জানান, উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে রঙিন মাছের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে এ ব্যবসা আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পেলে ব্যাপকভাবে রঙিন মাছ চাষ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। 

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার অ্যাকুয়ামিয়ামে রঙিন মাছ সংগ্রহকারী মুবাশ্বের হোসেন জানান, রঙিন মাছ দেশে উৎপাদন হওয়ায় অ্যাকুয়ারিয়ামে এই মাছ আমদানি অনেকটাই কমে এসেছে। এই খাতে দেশ ধীরে ধীরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত