মুক্তিযোদ্ধা ও কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী লাকী আকন্দের অসহায়ত্বে ক্ষুব্ধ মিডিয়া

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০১৬, ১৭:৪২

সাহস ডেস্ক

দেশের কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী লাকী আখন্দ গত বছর সরকারি সহায়তায় থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন মরণব্যাধী ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে। কিছুটা সুস্থ হয়ে ফিরেছেন চলতি বছরের মার্চে। কিন্তু আবারও তার অবস্থার অবনতি। ফুসফুসে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তিনি ভর্তি আছেন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ও ভক্তদের কাছে অর্থ সহায়তাও চেয়েছেন। কিন্তু একজন শিল্পী হিসেবে চিকিৎসার জন্য হাত পাতার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তার সহশিল্পীরা।

বাংলা সঙ্গীতে লাকী আখন্দের যে অবদান তা স্মরণ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার সতীর্থরা বলছেন, যদি লাকী আখন্দকে সঙ্গীত ইন্ডাস্ট্রি তার প্রাপ্য সম্মান যথাযথভাবে প্রদান করতো তাহলে অন্তত তার চিকিৎসার জন্য আজকে সরকার কিংবা ভক্ত অনুরাগীদের কাছে হাত পাততে হতো না।

ব্যক্তিগতভাবে লাকী আখন্দও বহুবার বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তাকে একজন শিল্পীর জন্য অসম্মানের বলে মনে করলেও দুর্ভাগ্যক্রমে নিজের চিকিৎসার জন্যই উপায়ন্তর না দেখে যখন সহায়তা চাইতেই হলো তখন গুণী শিল্পী আব্দুল হাদীর মুখেও শোনা গেল সেই আত্মমর্যাদার সুর। সৈয়দ আব্দুল হাদী বলেন, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন একজন শিল্পীর জন্য অর্থসহায়তা চাওয়া লজ্জার, লাকী আখন্দ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি আজকেই একটু আগে শুনলাম। এখনো তার সাথে কথা বা যোগাযোগ হয়নি। তবে সরকার বা ভক্ত অনুরাগীদের কাছে সহায়তা চাওয়ার বিষয়টা আমি ব্যক্তিগতভাবে  মেনে নিতে পারি না। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের জন্য এটা লজ্জার। আর লাকী আখন্দের মতো শিল্পীর এমন অবস্থায় আসতে হলো এটা একজন শিল্পী হিসেবে আমাদের জন্য বেদনার। আর্থিক সহায়তার বিষয়টা শিল্পীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত ছিল। একজন শিল্পীর এই সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রথমে শিল্পীদেরই এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। অতীতে আমরা এভাবেই এগিয়ে গেছি। কিন্তু এটা সত্য যে, ব্যক্তিগতভাবে শিল্পী হিসেবে আমি হয়তো কারো কাছে এভাবে সহায়তা চাইতাম না, কারণ একজন শিল্পীর জন্য এটা আত্মমর্যাদার প্রশ্ন।

জনপ্রিয় শিল্পী খুরশিদ আলম বলেন, ‘বাংলা সঙ্গীতে লাকীর অবদান অনেক। তার প্রচুর গান আছে, সবই হিট। ও আমার চেয়ে বয়সে ছোট। ওর শরীরের অবস্থা এত খারাপ, দেখে খারাপ লাগে তার বর্তমান অবস্থা দেখে। তার অসুস্থতায় অর্থাভাব আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। সাবিনার মতো শিল্পীর চিকিৎসার জন্য হাত পাততে হইতেছে, বিশ্বাস করতে পারেন! এটা শিল্পী হিসেবে সত্যিই খুব লজ্জার’।

জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘রেনেসাঁ’র ব্যান্ড প্রধান নকিব খান বলেন, আসলে বাংলাদেশে প্রত্যেক শিল্পীরই একই অবস্থা। লাকী আখন্দ যে গানগুলো গেয়েছেন তার রয়্যালটি এবং পরবর্তীতে যারা তার গান গাইছেন সেসবের রয়্যালটি যদি তাকে দেয়া হতো তাহলে শুধু লাকী আখন্দ নয়, যেকোনো শিল্পীরই এই অবস্থায় কারো কাছে হাত পাততে হতো না। শিল্পীর এই রয়্যালটি নিয়ে আমরাও অনেক আন্দোলন করেছি। আইনও হয়েছে, কিন্তু কার্যকর হয়নি। আসলে রয়্যালটি’র সংস্কৃতি বাংলাদেশে গড়েই ওঠেনি। যদি হতো তাহলে কোনো শিল্পী অন্তত অর্থাভাবে কষ্ট পেত না।

মূল কথা হচ্ছে লাকী আখন্দের মতো শিল্পীদের বেঁচে থাকার জন্য মানুষের কাছে সহায়তা চাইতে হয় এটা শুধু একজন কিংবা দুই তিনজন শিল্পীর জন্য কষ্টদায়ক ব্যাপার নয় বরং গোটা বাঙালি জাতির জন্য লজ্জার। এবং ভবিষ্যত শিল্পীদের জন্যও বড় হুমকি। যে মানুষটি শুধু গানই করেননি বরং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সরাসরি অস্ত্রহাতে রণাঙ্গণে যুদ্ধ করেছেন সেই আত্মমর্যাসম্পন্ন এই মানুষটির এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না সতীর্থসহ গোটা জাতি। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত