‘আমরাও উদ্বাস্তু ছিলাম পুরো ভারত সীমান্তজুড়ে’
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০১৭, ১৯:২৩
বার্মার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নির্যাতন চালাচ্ছে সুচির বার্মিজ সরকার। এখন পর্যন্ত যা খবর আটশতাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে বার্মার আরাকানে। দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকতে চাইছে নাফ নদী ও সমুদ্র পথ পেরিয়ে। জীবন বড় বালাই, বাঁচার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা। গুলিবিব্ধ ও আগুনে পোড়া মানুষরাও হাজির হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে, এদের কয়েকজন চিটাগাং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একদেশ থেকে অন্যদেশে হিজরত গুলিবিব্ধ অবস্থায়, বোঝা যাচ্ছে বার্মিজ সেনাসবাহিনী হামলা বেশ জোরদার ভাবেই করেছে। বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড রোহিঙ্গাদের আটকাতে চাইছে সীমান্তের ফাঁক গলিয়ে উদ্বাস্তু হিসাবে তারা ঠিকই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢূকছে।
৭১’এ আমরাও উদ্বাস্তু ছিলাম পুরো ভারত সীমান্তজুড়ে। এখন আমরা রোহিঙ্গাদের আটকাতে চাইছি তারা যেন আমাদের দেশে না ঢুকে!
শক্তির ভারসাম্য সমান থাকলে কেউ কাউকে ঝামেলা করে না। এখন বোঝা যাচ্ছে আমাদের সামরিক শক্তি বার্মার চাইতে কম, তাই বার্মা ঘাড়ের উপর চেপে বছেছে সিন্দাবাদের ভূতের মত। বিজিবি প্রধান বলেছেন বার্মিজ গার্ড আমাদের দিকে গুলি করলে দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে। পলায়নপর রোহিঙ্গাদের উপর পিছন দিক থেকে গুলি করা হচ্ছে, আমাদের দেশে ঢোকার সময়।
বিজিবি প্রধানের কাছে জিজ্ঞাস্য বার্মিজ গার্ড গুলি করছে তাহলে কাদের ভূখন্ডের দিকে?
আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার্মিজ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে যৌথ অপারেশনের দাবি তুলেছে, আরাকানে রোহিঙ্গাদের মাঝে কোন মুসলিম মিলিট্যান্ট গ্রুপ আছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য। এর আগের দিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে রোহিঙ্গাদের এ দেশে পাঠানোর নিন্দা জানিয়েছে।
সুচির বার্মিজ সরকার এ ব্যাপারে থোড়াই কেয়ার করছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও খুব সাড়া ফেলতে পেরেছি তা মনে হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও সুচির সরকারই এগিয়ে আছে এত নির্যাতন করার পরেও। ৮০’র দশক থেকে অদ্যাবধি এ সমস্যার কোন কূটনৈতিক সাফল্য আমারা দেখিনি। সামরিক শক্তিতে বলীয়ান বার্মিজ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে আমাদের কাঁধেই ফেলে রাখতে চাইছে।
৮০’র দশক থেকে এ পর্যন্ত অনেক রোহিঙ্গাই আমাদের দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছে। বার্মিজ সরকারও এটিই চাইছে, ঠেলে সব রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দাও। সাথে যোগ হয়েছে বার্মিজ বুড্ডিজ গ্রুপের বিরামহীন সাম্প্রদায়িক প্রচার ও প্রপাগান্ডা। যাদের একটি অংশ প্রকাশ্যেই দাবি উঠাচ্ছে রোহিঙ্গাদের বার্মিজ নাগরিকত্ব না দিতে। এখন এরা সুর মেলাচ্ছে বার্মিজ সেনাবাহিনীর সাথে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে। এর ফলাফলে আরাকানে সাম্প্রদায়িক বিভাজন চুড়ান্ত পর্যায়ে বাড়বে এবং রোহিঙ্গারা দেশ ত্যাগে বাধ্য হবে। মেরে কেটে তাবৎ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাও নইলে সমুদ্রে ভাসাও।
আমরা চায়নার কাছ থেকে সাবমেরিন কিনেছি ভারত বার্মার কাছে সাবমেরিন বিধ্বংসী টর্পেড বিক্রিতে নেমেছে।
আমরা চায়নার কাছ থেকে অস্র ও তাবৎ মেশিনারী এবং কাঁচামাল কিনছি। চায়না রোহিঙ্গা সমস্যায় কোন দিকে অবস্থান নিয়েছে তা কী আমরা জানি? নাকি চায়নার ঘুঁটিতেই বার্মিজ সরকার বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গা ইস্যু চালান করে দিয়েছে? অথবা সাবমেরিনের সাথে রোহিঙ্গা ইস্যুর কোন যোগাযোগ?
বুঝহ সুজন যে জন জানহ সন্ধান...
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হক এর ফেসবুক থেকে