ফিতরা নিয়ে বিজ্ঞ আলেমদের মতামত

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০১৬, ১৩:৩৭

সাহস ডেস্ক

ফিতরা আদায় করার হুকুমঃ 
সম্মানিত শাইখ আল্লামা আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেনঃ স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় প্রতিটি মুসলিমের উপর যাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। দলীল হচ্ছে ইবনে উমার (রাঃ)এর হাদীছ। তিনি বলেনঃ
فرض رسول الله صلى الله عليه وسلم- زكاة الفطر صاعاً من تمر أو صاعاً من شعير، على الذكر والأنثى والصغير والكبير والحر والعبد من المسلمين، وأمر أن تؤدى قبل خروج الناس للصلاة” متفق عليه
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের যাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব ফরজ করেছেন। তিনি লোকদের ঈদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

ফিতরার নিসাবঃ
ফিতরার কোন নিসাব নেই। একটি মুসলিম পরিবারের মালিকের নিকট একদিন ও এক রাতের খাদ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার নিজের এবং পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ হতে ফিতরা আদায় করতে হবে।

কাজের লোকের ফিতরা কে দিবে? 
কামলা ও বেতনভুক্ত কর্মচারীর ফিতরা মালিকের উপর আবশ্যক নয়। তবে তিনি ইচ্ছা অনুগ্রহ স্বরূপ দিতে পারবেন। কিন্তু ক্রতদাসের ফিতরা মনিবকেই দিতে হবে।

কি বস্তু দিয়ে ফিতরা আদায় করবে?
দেশীয় প্রধান খাদ্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। খেজুর, যব, গম, ভুট্রা বা অন্য যা কিছুই হোক না কেন। এটিই হচ্ছে আলেমদের নিকট অধিক বিশুদ্ধ মত। কেননা রাসূল (সাঃ) নির্দিষ্ট কোন একটি বস্তু নির্ধারণ করেন নি। কেননা সাদাকাতুল ফিতর গরীবদের উপর সমবেদনা স্বরূপ। তারা যে খাদ্য গ্রহণ করে তা বাদ দিয়ে অন্য জিনিষ দিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করা উচিত নয়। এক সা পরিমাণ দেশীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে। এক সা’র পরিমাণ হচ্ছে বর্তমাণ হিসাবে ২.৪০ (দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম)। অধিকাংশ আলেমের মতে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয নইে। এ মতটিই অধিক বিশুদ্ধ।

চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয হবে কি?
হাদীছে বর্ণিত জিনিষগুলো ছাড়া অন্য কোন দানা জাতীয় বস্তু দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয আছে, যদি তা দেশীয় খাদ্য হয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশী মুসলিমদের জন্য চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েয। কেননা চাউল বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকের খাদ্য। শুধু তাই নয়; চাউল দিয়ে ফিতরা দিলে গরীবদের প্রতি সবচেয়ে বেশী সহানুভুতি প্রদর্শণ করা হবে। কেননা বর্তমানে চাউল হচ্ছে মানুষের সর্বোত্তম খাদ্যদ্রব্য।

টাকা দিয়ে ফিতরা দিলে হবে কি?
এ ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। জমহুর তথা অধিকাংশ আলেমের মতে টাকা দিয়ে ফিতরা দিলে তা আদায় হবে না। খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করতে হবে। কেননা ইসলামের প্রথম যুগে টাকার লেনদেন থাকা সত্ত্বেও নবী (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীগণ খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করেছেন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বলেনঃ
كُنَّا نُخْرِجُ فِى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم – يَوْمَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ . وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ وَكَانَ طَعَامَنَا الشَّعِيرُ وَالزَّبِيبُ وَالأَقِطُ وَالتَّمْرُ
আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর যুগে ঈদের দিন এক ‘সা’ পরিমাণ খাদ্য সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতাম। সে যুগে আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনির এবং খেজুর। (বুখারী)

কতিপয় আলেমের মতে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে তা জায়েয হবে। বাংলাদেশের মুসলিমগণ টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চাইলে ২.৪০ (দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম) মধ্য মানের চাউলের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। তবে তা উত্তমের খেলাফ হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সহীহ হাদীছ মোতাবেক সকল আমল করার তাওফীক দিন। আমীন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত