দুর্মূল্যের বাজারে ‘এক টাকার হোটেল’

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ২০:৫৬

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত

দ্রব্যমূল্যের টানা ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। রমজানে তা যখন আরো লাগামহীন তখন গাইবান্ধার রোজাদারদের স্বস্তি দিচ্ছে এক দম্পতির উদ্যোগে পরিচালিত এক টাকার হোটেল।
অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনই এক ইফতার-খাবার হোটেলের সন্ধান মিলেছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ফরিদপুর গ্রামে। ওই গ্রামের সাবেক পুলিশ সদস্য জুয়েল মিয়া ও তার স্ত্রী লিপি বেগম পরিচালনা করছেন খাবার হোটেলটি।  
সেখানে এক টাকায় পাওয়া যায় পিয়াজু, ডাল পুরি, বেগুনি ও আলুর চপ। এছাড়াও রয়েছে খেজুর, ছোলাবুট ও বুন্দিয়াসহ নানা ধরনের ইফতার আইটেম।  
স্বল্পসময়ে ব্যতিক্রমÑ সেবাধর্মী হোটেলটির সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে জেলাজুড়ে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজু, ডালপুরি, বেগুনি, ছোলা ও বুন্দিয়াসহ নানা ইফতার সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লিপি বেগম।  যা প্রতি পিস বিক্রি হয় মাত্র এক টাকায়।  শুধু ইফতারের সামগ্রীই নয়, অর্ধেক মূল্যে এখানে পাওয়া যায় রুটি, পরোটা, চিকেন সামুচা, চিকেন বিরিয়ানি, এবং তন্দুরি চা। এসবের মধ্যে খেজুর ছাড়া সব আইটেম নিজ হাতে তৈরি করেন লিপি বেগম।
স্বল্প দাম এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যন্ত গ্রামে হওয়ায় এখানকার মূল ক্রেতা গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষ। স্বল্প মূল্য এসব ইফতার সামগ্রী কিনতে পেরে খুশি তারা।  এছাড়া ফেসবুকের কল্যাণে বিষয়টি জেনে দূর-দূরান্ত থেকে এমনকি পাশের জেলা থেকেও শখের বসে খেতে আসেন অনেকে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে এক টাকায় এমন সব মুখরোচক খাবার খেতে আসেন তারা।  
এভাবে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা সদর থেকে পনেরো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এক টাকার হোটেলের খাবারের স্বাদ নিয়েছেন রবিউল ও আশরাফুল নামে দুই বন্ধু।  তারা জানান, আমরা ফেসবুকে এই এক টাকার হোটেলের খবর পেয়ে খেতে এসেছি। এখানে সত্যিই এক টাকায় অনেক ধরনের খাবার মেলে। যা মানসম্মত ও সুস্বাদু। অনেকটা ঘরোয়া খাবারের মতো।
ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কদ্দুস মিয়া এবং আলেফা বেগম বলেন, এখানে প্রতি পিস এক টাকা দামে পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য আশীর্বাদ। রোজাদাররা অল্প টাকায় এখানে থেকে ইফতারি কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।
লিপি বেগম বলেন, আমরা যেহেতু কমমূল্যে খাবার-ইফতার সামগ্রী বিক্রি করি। সে কারণে উৎপাদন খরচ কমাতে নিজেরাই সব কাজ করে থাকি। আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকে মানুষকে টাটকা এবং সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা। যাতে মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পায়।
জুয়েল মিয়া বলেন, আমরা যেহেতু নিজেরাই সব কাজ করি। তাই কমমূল্যে খাবার বিক্রিতে লাভ কম হয়, কিন্তু লোকসান গুনতে হয় না। আমাদের লক্ষ্য ব্যবসার পাশাপাশি মানুষের সেবা করা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিজেরা একটু কম লাভ করে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করা। বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারিতে। এ সময় ক্রেতার চাপ বেড়ে যায়। ফলে তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
তিনি আরো বলেন, ব্যক্তিগত কারণে তিন বছর আগে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সম্প্রতি এক টাকার খাবারের দোকান শুরু করেছেন। আর এখান থেকেই যা আয় হয় তাতেই মিটছে দুই সন্তানসহ চার সদস্যের চাহিদা। আগামীতে বড় পরিসরে ব্যবসার পাশাপাশি এ ধরনের সেবার পরিধি বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।  
এ ব্যাপারে পবনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহ্বুবুর রহমান জানান,  জুয়েল মিয়া ও লিপি বেগম দম্পতির এক টাকার হোটেল প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি মহতি উদ্যোগ। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ সুফল পাচ্ছে। বিশেষ করে রোজাদারদের ইফতারিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত